জাতীয় পরিচয়পত্রে (NID বা ভোটার আইডি ) আপনার নিজের নাম, আপনার পিতা-মাতার নাম, আপনার ঠিকানাসহ যেকোনো ভুল সংশোধন করে নিতে পারবেন অনেক সহজেই। যদি আপনি অনলাইনে নিজেই আবেদন করেন মাত্র ৩৪৫ টাকা ফি দিয়ে ৭ দিনের মধ্যেই পেয়ে যেতে পারেন সংশোধিত এনআইডি বা ভোটার আইডি কার্ড।
আপনি যদি খুঁজে থাকেন কিভাবে অনলাইনে NID বা ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করা যায়, ভোটার আইডি বা NID কার্ডে নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে, অনলাইনে ভোটার আইডি বা NID কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে, ভোটার আইডি বা NID কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে, ভোটার আইডি বা NID কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করা যায় কিভাবে, ভোটার আইডি বা NID কার্ড বয়স সংশোধন করতে কি কি লাগে, ভোটার আইডি বা NID কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন ফরম ১৩, ভোটার আইডি বা NID কার্ড কতবার সংশোধন করা যায়, সেজন্য কীভাবে আবেদন করতে হয় আবেদনের ফি কীভাবে পরিশোধ করা যায়- চলুন জেনে নেয়া যাক।
ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধনে রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে
আপনি মোবাইল ফোনের Google Chrome ব্রাউজার খুলে NIDBD ঠিকানায় প্রবেশ করবেন। এই লিংকের মাধ্যমে সরাসরি এনআইডি পোর্টালে পৌঁছানো যাবে।
এখানে অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন। এরমধ্যে আপনি > রেজিস্ট্রার করুন < অপশনে গিয়ে ক্লিক করুন। এখান থেকে এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ দিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় ঘরগুলো তথ্য দিয়ে পূরণ করুন, বর্তমান ঠিকানা সিলেক্ট করুন এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিন।
অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি শেষ করতে হলে আপনাকে (Google Play Store) গুগল প্লে ষ্টোর থেকে NID Wallet নামে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে ফোনে (Install) ইন্সটল করে নিতে হবে আপনাকে। যদি আপনি আবেদন করতে চান তাহলে আপনাকে একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সহযোগিতা নিতে হবে।
এক্ষেত্রে লাল বৃত্তটিতে ক্লিক করলে একটি বারকোড দেখাবে। এই বার কোডটি স্ক্যান করে আপনি সরাসরি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের প্লে স্টোরে চলে যেতে পারবেন।
NID Wallet অ্যাপ ইনস্টল করার পর আপনি যখন অ্যাপটিতে প্রবেশ করবেন, তখন একটি ফেস স্ক্যান বা মুখ স্ক্যান করার অপশন দেখতে পাবেন। এই অপশনে ক্লিক করলে আপনার মোবাইল ফোনের ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে। এরপর ক্যামেরার সাহায্যে আপনার মুখের ছবি বা চেহারা স্ক্যান করা হবে। এই স্ক্যান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার পরিচয় যাচাই (ভেরিফিকেশন) করা হয়, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আপনি আসলেই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের মালিক। এটি একটি নিরাপদ এবং সহজ পদ্ধতি, যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতেও সহায়তা করে।
ফেস স্ক্যান করার আপনি পরবর্তী ধাপটিতে > বিস্তারিত প্রোফাইল < অপশনে ঢুকবেন। সেখানে > এডিট < অপশন পাবেন। এখানে আপনার এনআইডির সকল তথ্য এডিট অর্থাৎ সংশোধন, সংযোজন কিংবা বিয়োজন করতে পারবেন।
ভোটার আইডি বা NID কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
আপনার তথ্য প্রয়োজনীয় সংশোধন করার পর > পরবর্তী < অপশনে ক্লিক করলে আপনার পুরনো এবং সংশোধিত নতুন তথ্য পাশাপাশি দেখা যাবে, সেটা আপনি ভালোভাবে দেখে নিবেন। সেখান থেকে আপনার সংশোধিত তথ্য ঠিকঠাক আছে কি না ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। সঠিক থাকলে নির্ধারিত ফি দিতে হবে।
খুব সহজে ফি দেয়ার জন্য আপনি সরাসরি চলে যান আপনার মোবাইলের বিকাশ অ্যাপে। সেখান থেকে > পে বিল < অপশনটিতে গেলে নিচের দিকে > NID Service সরকারি ফি < নামে একটা অপশন পাবেন।
অপশনে গিয়ে আবেদনের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। যেহেতু এনআইডির ভুল সংশোধনের জন্য আপনি ফি দেবেন, তাই > NID Information Correction < অপশনটি সিলেক্ট করুন। এরপর নিচে আপনার এনআইডি নম্বরটা বসিয়ে দিন। এবার সামনে এগুলোই দেখবেন অটোমেটিক ৩৪৫ টাকা ফি বাবদ দেখাবে। আপনি বিকাশের গোপন পিন নম্বর দিয়ে পেমেন্ট করেন।
এরপর ব্রাউজারে গিয়ে আগের পেজটি রিফ্রেশ করলেই ৩৪৫ টাকা ডিপোজিট দেখাতে পাবেন। এখন পরবর্তী ধাপে গিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো আপলোড করে দিন।
মনে রাখবেন আপনার আপলোডকৃত ফাইলের সাইজ ১০০ কিলোবাইটের মধ্যে থাকতে হবে।
NID বা ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে
ডাক নাম বা অন্য যেকোন নামে নিবন্ধিত হলে সংশোধনের জন্য আবেদনের সাথে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে আপনাকে :
ফটোকপি এস.এস.সি/সমমান সনদের সত্যায়িত,
স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি/ বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী,
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিট সেই সাথে
জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের কপি।
পরবর্তীতে ব্যক্তিগত শুনানির সময় কাগজপত্রের মূল কপিসহ উপস্থিত হবেন।
পিতা-মাতা/ স্বামীর নাম সংশোধনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে
পিতা-মাতা/ স্বামীর নাম সংশোধনের জন্যআবেদন পত্রের সাথে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
এস.এসসি/সমমান সনদ,
জন্ম সনদ,
নাগরিকত্ব সনদ,
পাসপোর্ট,
চাকরির প্রমাণপত্র,
নিকাহনামা এবং
পিতা-মাতা/স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
পিতা-মাতা মৃত হলে অন্যান্য ভাইবোনের পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং
অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য কাগজের সত্যায়িত কপি।
এক্ষেত্রে প্রকল্প কাৰ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে সাক্ষাত দিতে যেতে হতে পারে।
আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত দলিলাদি অবশ্যই সত্যায়িত করে নিয়ে আসতে হবে।
সাধারণত, প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লিখিত তারিখে সংশোধিত পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়।
বিবাহ বা বিচ্ছেদের কারণে NID বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে
বিবাহের কারণে স্বামীর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও কাবিননামা দাখিল করতে হবে।
বিবাহ-বিচ্ছেদের কারণে স্বামীর নাম বাদ দিতে চাইলে তালাকনামার সত্যায়িত সহ কপি দাখিল করতে হবে।
দলিলাদি দাখিলের সময় একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেয়া হয়। সেই কাগজে উল্লিখিত তারিখেই সাধারণত সংশোধিত পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়।
ভোটার আইডি বা NID কার্ডে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে
যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি বা সমমান তাদের জন্মতারিখ সংশোধনের সময় আবশ্যিকভাবে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে।
বয়সের পার্থক্য অস্বাভাবিক না হলে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লিখিত তারিখের সংশোধিত পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়।
অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সনদের মূল কপি দেখাতে হবে কিংবা ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে হতে পারে।
যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনূর্ধ্ব এসএসসি বা সমমান তাদের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু তারিখের আগের তারিখের
ড্রাইভিং লাইসেন্স,
সার্ভিস বুক/এমপিও র কপি,
নিকাহনামা
জন্ম সনদ,
এবং
পাসপোর্টর কপি ইত্যাদি দাখিল করতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রকল্প কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়। তারা যদি মনে করে প্রয়োজন তাহলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করা হয়।
ভোটার আইডি বা NID কার্ডে রক্তের গ্রুপ সংশোধনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে
জাতীয় পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপ সংশোধন বা অন্তর্ভুক্ত করতে হলে মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
ভোটার আইডি বা NID কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন ফরম ১৩
ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ফরম-১৩/ফরম-১৪ এ সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
প্রকল্প অফিসের ভোটার এলাকা পরিবর্তন ছাড়া শুধু ঠিকানায় নম্বর বা বানান ভুল থাকলে তা সংশোধন করা হয়।
এজন্য চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি দাখিল করতে হবে।
পরিবারের কোনো সদস্যের পরিচয়পত্রের কপি,
গ্যাস/বিদ্যুৎ/টেলিফোন বিলের কপি, কর আদায়ের কপি
জাতীয় পরিচয়পত্রের অন্যান্য সংশোধন
জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো নামের পূর্বে যেকোন পদবী, উপাধি, খেতাব ইত্যাদি সংযুক্ত করা যাবে না।
পিতা/ মাতাকে/ স্বামীমৃত উল্লেখ করতে চাইলে মৃত্যু সনদ দাখিল করতে হবে।
জীবিত পিতা/স্বামী/মাতাকে ভুলক্রমে মৃত হিসেবে উল্লেখ করার কারণে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্রের কপি দাখিল করতে হবে।
কতবার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা যায়
সর্বোচ্চ ১ বার সংশোধন NID বা ভোটার আইডি কার্ড করতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে NID বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে, অন্যথায় উক্ত সংশোধনের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
হারানো ভোটার আইডি বা NID কার্ড ডুপ্লিকেট ইস্যু
আপনার পরিচয়পত্র হারানোর ক্ষেত্রে থানায় ভোটার নম্বর বা আইডি নম্বর উল্লেখ করে জিডি করতে হবে। এরপর ওই জিডির কপিসহ সাদা কাগজ অথবা সরবরাহকৃত ছকে আবেদনপত্র নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র গ্রহণ করতে হবে।
প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লিখিত ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়। নম্বর ভুল হলে ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্র ইস্যুকরণে সময় বেশি লাগতেও পারে।
আপনার ডকুমেন্টগুলো আপলোড করা হয়ে গেলে আবেদনটি সাবমিট করে দিতে হবে।
অনলাইনে ভোটার আইডি বা NID কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে
সংশোধিত নতুন এনআইডি প্রস্তুত হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে আপনার মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস পাঠানো হবে। আপনি সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে এটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন। অথবা বাসায় বসেও মোবাইল দিয়ে এটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
অনলাইনে ভোটার আইডি বা NID কার্ড সংশোধন করতে ৭ (সাত) দিন লাগে।
বিতরণের জন্য নির্ধারিত তারিখের ৭ (সাত) দিনের মধ্যে কাউন্টার হতে সংশোধিত পরিচয়পত্র গ্রহণ না করলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
শেষ কথা:
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে কার্ডে উল্লেখ করা ব্যক্তিগত তথ্যগুলোর প্রতি। যেমন—নিজের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম এবং জন্মতারিখের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঠিকভাবে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এসব তথ্য ভুলভাবে দিলে ভবিষ্যতে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিবন্ধনের সময়েই এসব তথ্য যেন জন্ম নিবন্ধন সনদ ও মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়, তা ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। এতে ভবিষ্যতে বারবার সংশোধনের ঝামেলা এড়ানো যাবে।

আমি নাহিন রহমান একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি। লেখালিখির প্রতি গভীর আগ্রহ এবং অনুপ্রেরণার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত আমার ওয়েবসাইট UpdateBanglaNews.com পাঠকদের জন্য নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে শিক্ষামূলক, প্রযুক্তিগত, চাকরির খবর, খেলাধুলা, ধর্মীয় এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের তথ্য ও সংবাদ। আমাদের এই প্ল্যাটফর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বাসযোগ্য ও সময়োপযোগী তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে পাঠকদের জ্ঞানবৃদ্ধি এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা।