ক্রিপ্টোকারেন্সি কি কত প্রকার হালাল নাকি হারাম,বাংলাদেশের বৈধতা

ক্রিপ্টোকারেন্সি কি হালাল নাকি হারাম

ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের সাংকেতিক ডিজিটাল মুদ্রা। শুধুমাত্র ইন্টারনেট জগতেই এই মুদ্রা ব্যবহার করা হয়। বাস্তবে এ ধরনের মুদ্রার কোন অস্তিত্ব নেই। এটি এমন এক ধরনের মুদ্রা যা কোন দেশের সরকার ছাপায়নি। বরং এই অর্থ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দ্বারা ছোট ছোট কোডের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে আলোচনা করব।

অনলাইনে এনআইডি বা ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করবেন যেভাবে

ক্রিপ্টোকারেন্সি কি?

crypto currency হলো এক ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা  যা চোখে দেখা যায়না বা ছোঁয়াও যায়না। যা ডিজিটাল ওয়ালেটে সেভ থাকে। যা শুধুমাত্র অনলাইনেই ট্রানজেকশন করা হয়। এ জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিকে অনলাইন কারেন্সিও বলা হয়। কারণ এটির সমস্ত কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আরও দেখুন

ক্রিপ্টোকারেন্সি কি হালাল নাকি হারাম

নিশ্চয়ই! “ক্রিপ্টোকারেন্সি হালাল নাকি হারাম?”—এটি ইসলামিক শিক্ষাবিদদের মধ্যে বিতর্কপূর্ণ একটি বিষয়। এখানে হালাল এবং হারাম—দু’দিকের কিছু স্বীকৃত মতামত তুলে ধরা হলো:

হারাম (নিষিদ্ধ) মনে করেন এমন আলেমদের মতামত

  • Grand Mufti of Egypt—Shaykh Shawki Allam: তিনি বলেন, বিটকয়েন বা অন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি উচ্চ মাত্রার অনিশ্চয়তা, প্রতারণার ঝুঁকি, এবং নিয়ন্ত্রণের অভাবে হারাম; কারণ এগুলি সরকারি বা নিয়ন্ত্রিত হয় না
  • Mufti Taqi Usmani এবং Shaykh Assim al-Hakeem: দুইজনেই সতর্ক করে বলছেন যে ক্রিপ্টোতে জুয়া (maisir) এবং gharar (অনিশ্চয়তা) বিদ্যমান, এবং তা রেহাই দেয় না
  • Turkish Religious Authority (Turkey): বলেছে ক্রিপ্টোতে অনিশ্চয়তা ও বেআইনি ব্যবহার (যেমন, মানি লন্ডারিং) রয়েছে, যা শরিয়া অনুসারে গ্রহণযোগ্য নয়
  • Islamic Finance Guru: আরও প্রতিবাদ করছে—মূলত বিপুল দামের ওঠাপড়া এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি, বিশেষ করে হ্যাকের চেয়ে, এটিকে কার্যকর এবং নিরাপদ মুদ্রা বলে বিবেচনা করা যায় না

হালাল (অনুমোদনযোগ্য) মনে করেন এমন আলেমদের মতামত

  • Mufti Muḥammad Abu-Bakar: তিনি দেখতে পান বিটকয়েন হালাল, কারণ এটি decentralized (কেন্দ্রবিহীন), interest (রিবা) মুক্ত এবং মুদ্রার মতো কার্যকর হতে পারে—মান, এক্সচেঞ্জ ও হিসাবের একক হিসেবে
  • Mufti Faraz Ahmed, এবং South African Islamic Seminary (Daruloom Zakariyya): তারা মনে করেন, যদি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হয়—যেমন সংরক্ষণযোগ্যতা, বাণিজ্যযোগ্যতা এবং বৈধ মূল্য—তবে বিটকয়েনকে “মাল” (Mal––শরীয়ত অনুযায়ী কিছুর মালিকানা) হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে ।
  • Islamic Economic Forum: তাদের যুক্তি—ক্রিপ্টো যদি রিবা, gharar বা গ্যাম্বলিং—এই রকম নিষিদ্ধ দিক না রাখে, তাহলে তা শরীয়ত সম্মত
  • PrimeXBT ব্লগ: কিছু ক্রিপ্টো সম্পদের ক্ষেত্রে, ডেসেন্ট্রালাইজড কাঠামো, স্বচ্ছতা এবং অনৈতিক ব্যবহারের অনুপস্থিতি এসব যথাযথ হলে হালাল হতে পারে

ক্রিপ্টোকারেন্সি কত প্রকার?

বর্তমানে সারা বিশ্বে চার হাজারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। বহুল পরিচিত ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে কিছু  ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম বা প্রকার নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ

  • বিটকয়েন (বিটিসি)
  • ইথেরিয়াম (ETH)
  • Litecoin (LTC)
  • ফেয়ারকয়েন (FAIR)
  • Dogecoin (Doge)
  • Ripple (XRP)
  • ড্যাশ (DASH)
  • Monero (XMR)
  • পিয়ারকয়েন (পিপিসি)

ডিজিটাল মুদ্রা কি?

ক্রিপ্টোকারেন্সি বুঝতে হলে ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কে জানতে হবে। ১৯৬০ এর দশকে ডাইনার্স ক্লাব নামের এক ধরনের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে ছিল। ১৯৭০ সালের পর থেকে ক্রেডিট কার্ড অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। বর্তমানে আমরা অনলাইন ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ডিজিটালি অর্থ আদান-প্রদান করি।

এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সার্ভিস চার্জ বাবদ বেশ কিছু টাকা কেটে রাখে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবার সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি গুটিকতক লোকের হাতে জিম্মি থাকে। এছাড়া লেনদেনের ক্ষেত্রে অর্থের মালিক গোপন তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয় এবং নানান ধরনের বিধি নিষেধের বেড়াজালে আটকে পড়ে। অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি আরো ঝুঁকিপূর্ণ।

ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে

কম্পিউটার ভিত্তিক যোগাযোগের ব্যাপক প্রচলন হবার পর থেকে মানুষ এমন এক ধরনের মুদ্রার স্বপ্ন দেখে আসছে, যা কোন ধরনের তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পরিচালিত হবে। ১৯৮৩ সালে ডেবিট জম ক্রিপ্টোগ্রাফিক পদ্ধতিতে টাকা আদান প্রদানের ধারণা প্রবর্তন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ডিজি ক্যাশের মাধ্যমে ক্রিপ্টোগ্রাফিক ইলেকট্রনিক্স পেমেন্টের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করেন।

কিন্তু তখনও ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা এবং নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর প্রযুক্তির অভাব ছিল। দীর্ঘদিন থেকে এসব সমস্যার সমাধান চাওয়া হলেও কেউই তা করতে পারছিলোনা। ২০০৮/২০০৯ সালের দিকে সাতোশি নাকামোতো নামের এক ছদ্দবেশী চরিত্র এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হন। তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি জনক হিসেবে পরিচিত।

কিন্তু এই সাতোশি নাকামোতো আসলে কে? তা কেউ জানে না। এটি কি কোন একক ব্যক্তির নাম নাকি একদম সফটওয়্যার বিজ্ঞানী তাও জানা যায় না। প্রকৃত সাতোশি নাকামোতো চায়ও না যে কেউ তাকে খুঁজে বের করতে পারুক। ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল ধারণাই হলো যে কেউ তার পরিচয় গোপন করে নিরাপদে সাধারণ মুদ্রার মতোই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে পারবে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি একাউন্ট

ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট খুলতে ব্যবহারকারীর নাম ঠিকানা বা ব্যক্তিগত তথ্যের দরকার হয়না। ক্রিপ্টোকারেন্সি সরাসরি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির ওয়ালেটে ট্রান্সফার হয়। মাঝখানে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খবরদারি করতে পারেনা।

ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো তৃতীয় পক্ষ সেবা প্রদান করেনা, তাই এখানে কোনো বাড়তি চার্জও নেই। সাতোশি নাকামোতো আবিষ্কৃত ক্রিপ্টোকারেন্সি পদ্ধতির প্রথম মুদ্রার নাম বিটকয়েন। বিটকয়েনের সফলতা এবং জনপ্রিয়তার পর এরকম অসংখ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্ভব হয়েছে। বর্তমানে চার হাজারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে, তার মধ্যে ইথেরিয়াম, লাইট কয়েন, রিবল, বাইট কয়েন, ডজ কয়েন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।

ব্লকচেইন কি?

ব্লকচেইন কি

সাতোশি নাকামোতোর যে আবিষ্কারের কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল তার নাম ব্লকচেইন। ব্লকচেইন হলো তথ্য সংরক্ষণের এক নতুন পদ্ধতি। ব্লকচেইন কে বলা যায় এক ধরনের লেজার বা হিসাবের খাতা। যা ব্যাংকের মতো ডিজিটাল অর্থনৈতিক লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করে।

কিন্তু এই লেনদেনের হিসাব কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে কুক্ষিগত থাকে না। বরং এই লেজার ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে দেখা যায় এবং প্রতিটি লেনদেন ঘটার সাথে সাথে এই হিসেবের খাতা আপডেট হয়ে যায়। ক্রিপ্টোকারেন্সির বিশাল হিসেব মেলানো সহজ কাজ নয়, আবার এই কাজ করার জন্য কোন প্রতিষ্ঠানও নেই। এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য একদল লোক ভলেন্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে। বিনিময়ে ব্লক চেইন সিস্টেম সেসব ভলেন্টিয়ারকে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রদান করে।

মাইনিং কি?

ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করে ডিজিটাল অর্থ উপার্জন কে বলা হয় মাইনিং। মাইনিং করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার এর প্রয়োজন হয়। এছাড়া এ কাজে বিপুল পরিমান বিদ্যুৎও খরচ হয়।

ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্মই হয়েছে পরিচয় গোপন রেখে নিরাপদে অর্থ লেনদেন করার জন্য। কিন্তু এর পরও এই মুদ্রাব্যবস্থায় বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে গেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দিক হলো আপনি যদি একবার এর পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তাহলে আপনার টাকা আর কখনোই ফিরে পাবেন না।

কারণ এখানে পাসওয়ার্ড রিসেট এর কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া কোনো কারণে কম্পিউটার ক্রাশ করলে ক্রিপ্টোকারেন্সিও চিরতরে হারিয়ে যাবে। এখনও পর্যন্ত ২৫ লক্ষ বিটকয়েন হারিয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালের হিসেবে যার মূল্য ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

বিটকয়েন ওয়ালেট থেকে একজন ব্যক্তি ৭০ মিলিয়ন ডলার হারিয়ে ফেলেছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে এত বিপুল পরিমাণ অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ নয়। সে কারণে অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি রাখার জন্য এক ধরনের third-party ওয়ালেটের আশ্রয় নেয়। যাদেরকে ক্রিপ্টো ব্যাংক বলা হয়।

যদিও অনেকগুলো ব্যাংকের মতো নয়, বরং মানি এক্সচেঞ্জ এর কাজ করে। এসব ওয়ালেট ব্যবহার করে সাধারণ টাকাকে ক্রিপ্টো মানি বা ক্রিপ্টো মানিকে সাধারণ টাকায় পরিণত করা যায়। হ্যাকিং এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এ ধরনের বহু ক্রিপ্টোকারেন্সি কোম্পানিও তাদের বিপুল অর্থ হারিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ বিটষ্ট্যাম্প, টোকেয় ভিত্তিক কয়েনচেঞ্জ এবং এমটি গক্স, বিট ফিনেক্স, ইথেরিয়াম ক্লাসিক সহ অনেক কোম্পানি হ্যাকিং এর শিকার হয়েছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশে বৈধ

ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর কোন দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অনেক দেশেই এ ধরনের মুদ্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ঝুঁকি থাকা সত্বেও ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের বিপ্লবের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে বহু জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন সমর্থন করছে।

তরুণ প্রজন্ম এই নতুন ধরনের মুদ্রার পেছনে সবচেয়ে বেশি সময় শ্রম ও অর্থ ব্যয় করছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী বহু কিশোর-তরুণ ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে মিলিয়নিয়ার হয়ে গেছে। যাদেরকে বলা হয় ক্রিপ্টো মিলিয়নিয়ার। তবে বাংলাদেশে এখনো কারেন্সি বৈধ করা হয়নি. বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালে অবৈধ ঘোষণা করেছে ক্রিপ্টোকারেন্সির সবচেয়ে জনপ্রিয় মুদ্রা বিটকয়েনকে

সমাপনী

বন্ধুরা আর্টিকেলটি পড়ে হয়তো আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? ক্রিপ্টোকারেন্সি কত প্রকার? এবং এটা কিভাবে কাজ করে? সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *