পাসপোর্ট অফিসে দীর্ঘ লাইন এবং দালালের ভোগান্তি এখন অতীত। পাসপোর্ট অফিসের দীর্ঘ লাইন এবং দালালের ভোগান্তি এখন অতীত। ঢাকা শহরের ভেতরে চালু হয়েছে নতুন নাগরিক সেবা কেন্দ্র যেখানে আপনি সহজেই পাসপোর্ট আবেদন ও নবায়ন করতে পারবেন। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কোথায় এবং কিভাবে এই সেবা পাওয়া যাবে এবং পাসপোর্ট ছাড়াও আর কি কি সুবিধা মিলছে।
পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কথা ভাবলেই কি আপনার বিরক্তি আসে? কিংবা দালালের খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত টাকা আর হয়রানির শিকার হওয়ার ভয় কাজ করে? আপনার মত হাজারো মানুষের এই ভোগান্তি ছিল নৃত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
আরো পড়ুনঃ ২০২৬ সালের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা বিশ্ব ইজতেমা কত তারিখে সময়সূচি প্রথম পর্ব ও দ্বিতীয় পর্ব
কিন্তু ভাবুন তো, যদি আপনার বাড়ির কাছে এমন কোন জায়গা থাকে, যেখানে কোন ঝামেলা ছাড়াই পাসপোর্টের আবেদন বা নবায়ন করা যায়? আনন্দের বিষয় হল সেই স্বপ্ন এখন সত্যি। সরকার এমন এক দারুন ব্যবস্থা চালু করেছে যা পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াকে আগের চেয়ে অনেক সহজ করে দিয়েছে।
এই লিখাটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন
- ঢাকার কোন কোন এলাকায় এই নতুন সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে।
- পাসপোর্ট ছাড়াও আর কি কি জরুরী সেবা পাওয়া যায়
- এই উদ্যোগ কিভাবে আপনার সময় টাকা, এবং হয়রানি বাঁচাবে।
চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ
পাসপোর্ট সেবা এখন আপনার দোরগোড়ায়
বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য পাসপোর্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় পত্র। বিদেশে ভ্রমণ থেকে শুরু করে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে এর প্রয়োজন হয়।তবে এই জরুরি জিনিসটি পেতে মানুষকে যে পরিমাণ কষ্ট করতে হতো, তা এখন শেষের পথে। সরকার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে পাসপোর্ট অফিসের বাইরেও এখন পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে এনআইডি বা ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করবেন যেভাবে
কি এই নতুন নাগরিক সেবা কেন্দ্র?
সরকারের নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নাগরিক সেবা কেন্দ্র (Citizen Service Center) চালু করা হয়েছে। এগুলো মূলত ওয়ান-স্টপ সার্ভিস পয়েন্ট। যেখানে সাধারণ মানুষ একটি ছাদের নিচে একাধিক সরকারী সেবা পাবে। এর প্রধান লক্ষণ হল সরকারি সেবা মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসা এবং হয়রানিমুক্ত করা।
ঢাকার কোথায় কোথায় মিলছে সেবা?
প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকার ছয়টি অঞ্চলের দশটি কেন্দ্রে এ সেবা চালু হচ্ছে। এলাকাগুলো হলঃ
- গুলশান
- উত্তরা
- নীলক্ষেত
- রমনা
- মোহাম্মদপুর
- বনশ্রী
এর মধ্যে গুলশান, উত্তরা এবং নীলক্ষেতের সেবা কেন্দ্রগুলো ইতিমধ্যে পুরো দমে কাজ শুরু করেছে। বাকি কেন্দ্রগুলোও খুব শীঘ্রই চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুধু পাসপোর্ট নয়, মিলবে আরও অনেক কিছু
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করার নিয়ম কানুন
এই সেবা কেন্দ্রগুলোর সব চেয়ে বড় সুবিধা হল, এখানে শুধু পাসপোর্ট নয়, আরো প্রায় চারশো ধরনের সরকারি সেবা পাওয়া যাবে। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেবা হলঃ
- ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন ও নবায়ন
- জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন
- জাতীয় পরিচয় পত্র NID সংক্রান্ত সেবা
- বিভিন্ন সরকারি অফিসের প্রত্যয়ন পত্র
এর ফলে আপনাকে আর একেক কাজের জন্য একেক অফিসে দৌড়াতে হবে না। একই জায়গা থেকে একাধিক জরুরি কাজ সেরে ফেলা সম্ভব হবে।
ন্যাশনাল এপিআই কানেক্টিভিটি হাব নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই উদ্যোগটি একটি বড় পরিকল্পনার অংশ। সরকার একটি ‘ন্যাশনাল এপিআই কানেক্টিভিটি হাব’ তৈরি করছে। এর মানে হলো, সব সরকারি সেবা একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত হবে। ফলে নাগরিকদের আর ভিন্ন ভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে না। একটি জায়গা থেকেই সব সেবা গ্রহণ করা যাবে, যা দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
আরো পড়ুনঃ Facebook Monetization in Bangladesh (ফেসবুক মনিটাইজেশন)
আমরা কীভাবে এই তথ্যগুলো জেনেছি
এই আর্টিকেলে দেওয়া সমস্ত তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়বের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া ঘোষণা এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো আপনাদের কাছে সঠিক ও যাচাইকৃত তথ্য পৌঁছে দেওয়া।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্ন: এই সেবা কেন্দ্রগুলোতে কি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, এখানে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন এবং পুরোনো পাসপোর্টের নবায়ন—দুটি সেবাই পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: ঢাকার বাইরের নাগরিকরা কি এই সুবিধা পাবে?
উত্তর: বর্তমানে এই সেবাটি শুধু ঢাকার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় চালু হয়েছে। তবে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এমন সেবা কেন্দ্র ছড়িয়ে দেওয়ার।
প্রশ্ন: এই সেবা কেন্দ্রগুলো কি সরকারি নাকি বেসরকারি?
উত্তর: এটি একটি উদ্যোক্তা-নির্ভর মডেল, যা সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে সেবার মান ভালো হওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্ন: এই সেবা নিতে কি অতিরিক্ত কোনো খরচ হবে?
আরো পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংক লোন নেওয়ার পূর্ণাঙ্গ গাইড
উত্তর: পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি জমা দিতে হবে। এর বাইরে সেবা কেন্দ্রগুলো তাদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি নিতে পারে, যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত থাকবে।
শেষ কথা
পাসপোর্ট সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এর ফলে সাধারণ মানুষের সময় ও অর্থ যেমন বাঁচবে, তেমনই দালালদের দৌরাত্ম্য থেকেও মুক্তি মিলবে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের পথে আরও এক ধাপ অগ্রগতি। আশা করা যায়, এই ধরনের নাগরিক-বান্ধব সেবা ভবিষ্যতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষের জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে।
